ভক্তবৃন্দ সব শুনে ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করলেন -- "সত্যিকার ভক্ত কি গুরুর সেবা গ্রহণ করতে পারে?" ঠাকুর মধুর কন্ঠে জবাব দিলেন -- "এতে কোন দোষ হয় না।"

 শ্রীশ্রীরামঠাকুরের লীলা মাধুরীঃ~



তোমার সেবা করাই আমার অর্চনা ।
তোমার দেহের পালন রক্ষণই হল আমার ভজন...
তোমার যত্ন জিজ্ঞাসাই হল আমার যোগ ধ্যান।
তোমার কাজে তন্ময় হয়ে থাকাই আমার সমাধি.....
এই অধিকারটুকু থেকে আমায় বঞ্চিত কোর না কখনও......
অনুগত ভক্ত পঞ্চানন বাবু।
ঠাকুরের সেবা করেন, পরিচর্যা করেন।
তাঁর তল্পিতল্পা বহন করেন।
ঘুরতে ঘুরতে দুজনে এসেছেন বৃন্দাবনে।
আর অন্যান্য ভক্ত শিষ্যের ভিড় নেই এখানে।
পঞ্চানন বাবুর মনে তাই খুব আনন্দ।
এবার একেবারে একান্তে অন্তর মন ঢেলে ঠাকুরসেবা করবেন তিনি... মনের মত সেবা দিয়ে, পূজা দিয়ে প্রীতি বিধান করবেন তাঁর।
ভক্তের হৃদয়বাসনা ত আর অগোচর নেই ঠাকুরের.... ছলনার চাদর জড়ালেন গায়ে।
...............................................
......................................................

ভোর না হতেই ঠাকুর পঞ্চানন বাবুকে তাগিদ দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন যমুনায়।
বললেন-- "একটু তাড়াতাড়ি না গেলে বালু যে তেতে উঠবে। ফিরতে কষ্ট হবে।"
স্নেহমাখা সুধাকণ্ঠ.... মন ভরে গেল পঞ্চানন বাবুর।
আজ্ঞাবহ ভৃত্যের মত যমুনায় স্নান করতে চলে গেলেন পঞ্চানন.
ফিরেও এলেন স্নান সেরে।


কিন্তু এসব কি....এ তিনি কি দেখছেন...!!!
ধরানো হয়েছে উনুন..... রান্নাবান্না ও প্রায় হয়েই গিয়েছে....এমনকি শাক ভাজাও প্রায় সমাপ্ত....
শুধু কি তাই???
ন্যাকড়ায় বেঁধে কিছু ডাল ছেড়ে দিয়ে ভাতের হাঁড়িও চাপিয়ে দিয়েছেন ঠাকুর।
সব নিপুণভাবে সমাধা করে রেখেছেন রন্ধনে নিপুণ ঠাকুর রামচন্দ্র।
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন পঞ্চানন।
হু হু করে বেদনার মেঘ মনের দিগন্তে সঞ্চারিত হয়....
কি করে এ অন্ন গ্রহণ করবেন ভক্ত পঞ্চানন।
ঠাকুর যে এর কিছুই গ্রহণ করবেন না....
সব ব্যবস্থাই শুধু পঞ্চাননের ভোজন জন্য।
তবে ঠাকুর কি খাবেন???
তিনি খাবেন সামান্য কয়টা খেজুর, মনক্কা আর জল। অন্ন ব্যঞ্জন ত তিনি গ্রহণ করেন না।


পঞ্চানন তীব্রভাবে এ কাজের প্রতিবাদ করলেন.... রাগে দুঃখে অভিমানে ফেটে পড়লেন তিনি।শুরু করে দিলেন মস্ত হৈচৈ।
কিন্তু কি হবে তাতে....
রাত ভোর হতেই আবার সেই আদেশ--
...................................................................
.....................................................................

"যান তাড়াতাড়ি করে যমুনায় গিয়ে স্নানটা সেরে আসুন.....।"
একান্ত অনিচ্ছায় ত্রস্ত পদ সঞ্চারে পরিক্রম করেন পথ.... আদেশ অমান্য করবার সাধ্য যে তার নেই।
ফিরে এসে দেখেন ঠিক পূর্ব দিনেরই দৃশ্য।
সব পর্ব ত সারা.....।
এই ত শেষ নয়....


তখন গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ... উত্তাপ যেন বেড়েই চলেছে.... বৃন্দাবনের পথে পা দেওয়াই যাচ্ছে না। দুপুরে ঘর থেকে বাইরে পা দেওয়া একেবারেই দুঃসাধ্য...
...........................
...........................+
সারা দুপুর পঞ্চানন চেষ্টা করেন ঠাকুরের সাথে কথাবার্তা বলে কাটাতে। নয়ত যে আরেক দৃশ্য......

যদি মাঝে কখনও পঞ্চাননের ঘুম আসে, যদি চোখ লেগে যায় -- যদি বা ঘুমিয়ে পড়েন, জেগে দেখেন --ঠাকুর পরম স্নেহে ধীরে ধীরে পাখা দিয়ে হাওয়া করছেন। আবার কখনও বা ভিজে গামছা দিয়ে মুছিয়ে দিচ্ছেন তার সর্বাঙ্গ।


ঘুম ভাঙ্গতেই তাই লাফিয়ে ওঠেন পঞ্চানন। সহ্য হয় না তাঁর..... দুঃসহ এক যাতনায় তাঁর দেহ মন প্রাণ যেন পুড়ে ছাই হয়ে যেতে চায়....।

না, আর বৃন্দাবনে নয়... আর থাকব না এখানে... অন্য কোথাও চলে যাব... দৃঢ প্রতিজ্ঞ হতে চান পঞ্চানন... কিন্তু ঠাকুরকে একা ফেলে কি করে যাব আমি? কার কাছে রেখে যাব? এভাবে ত যাওয়া যায় না - নিজেই নিজেকে প্রবোধ দেন পঞ্চানন।
আর সব পরিকল্পনা হাওয়ার মত মিলিয়ে যায় শূণ্যে....
বৃন্দাবনে এসে ব্রজভাবে ভাবিত ঠাকুর..
ভক্তজন সঙ্গে করছেন ব্রজরস আস্বাদন।
কোন ছোট-বড় নেই...প্রভু ভৃত্যের সম্পর্ক এখানে অচল...
ব্রজে শুধু তুমি আর আমি।
রাগানুগা ভক্তি....
ঠাকুর এখানে ঐশ্বর্য্য বর্জিত একটি সহজ মানুষ।
কান্ত কান্তার মিলনের মধ্য দিয়ে চলে ভক্তের সেবা অর্চা....ভগবান এখানে একান্ত ভাবেই মানবীয়।
পিরীতি রসের নাগর সেজেছেন ঠাকুর।
তাই ত ভক্তকে পা থেকে তুলে নিয়েছেন বুকে.... করছেন তাঁর সেবা। আর ঠাকুর ভাসছেন আনন্দরসে।
পীরীতির রীতি বড় বিপরীত... রাগানুগার অনুগ হতে হলে ভগবানকে যে নেমে আসতে হয় ভক্তের দুয়ারে....
এ যে সেই লীলা.... সেই খেলা...

পঞ্চানন বোঝেন না এসব। কিন্তু দেখছেন ঠিক সহজভাবে বন্ধুভাবে মিলতে পারছেন না যেন।
বৃন্দাবনে এসে তাই ত ভক্তকে আস্বাদন করাচ্ছেন ব্রজরস।বৈধীর বৈকুন্ঠ থেকে তুলে এনেছেন ভক্তকে রাগানুগার লীলা কুঞ্জে।
সেদিন অবস্থা গেল চরমে। যেন মরম ধরে টান দিলেন ঠাকুর।
আজ ভৃত্য আসেনি। অসুস্থ হয়ে বাড়িতে।
এখন কি উপায় হবে? রাত ভোর হলেই ত জলের প্রয়োজন হবে- রান্না আছে। সন্ধ্যায় জল তুলে না রাখলে মহা বিপদ।
স্থির হল কাল সকালেই জল তোলা হবে।যদি ভৃত্য সকালে চলে আসে....
ঠাকুর সম্মতি দিলেন। তাই হবে...
সন্ধ্যা নেমে এসেছে.... পঞ্চানন বাজারে গিয়ে কিছু পুরী তরকারী কিনে ফিরলেন।
বাড়ীতে পা দিয়েই চক্ষুস্থির পঞ্চাননের...
মাথা ঝিমঝিম।
এর মধ্যেই সব ব্যবস্থা পূর্ণ....
কূয়া থেকে প্রচুর জল তুলেছেন ঠাকুর।
ঘড়া বালতি সব রেখেছেন পূর্ণ করে।
যেন মহা নিশ্চিন্ত ঠাকুর.... পরম তৃপ্তিভরে চুপ করে বসে রয়েছেন একধারে।

আর পারা গেল না.....রাগে পঞ্চানন ত অগ্নিশর্মা... কটমটিয়ে ঠাকুরের পানে চেয়েই আছেন....
মাথা নীচু করে বসে আছেন ঠাকুর।
বসে রয়েছেন বালগোপালটি হয়ে।
যেন মস্ত অপরাধে অপরাধী....
এই ত লীলা....ভক্ত ভগবানের প্রেমের খেলা
কিন্তু পঞ্চানন ত এখনও পড়ে আছেন বৈধীর বৈকুন্ঠে....তিনি বৃন্দাবনের লীলার কি বুঝবেন???
রাগে অভিমানে তিনি চীৎকার করে উঠলেন--
"বলি এ জল কোন কাজে লাগবে বলতে পারেন? আপনার শ্রাদ্ধে, না আমার শ্রাদ্ধে?"

কিকরে এ জল ব্যবহার করবেন পঞ্চানন।
তাই বাধ্য হয়ে সব জল ফেলে দিলেন তিনি। আবার নতুন করে জল তুলছেন।
ঠাকুর নীরবে অপরাধীর মত পঞ্চানন বাবুর পানে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।
আর এখানে নয়। পরদিনই ঠাকুরকে নিয়ে পঞ্চানন বাবু চলে এলেন কলকাতায়।


ভক্তবৃন্দ সব শুনে ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করলেন -- "সত্যিকার ভক্ত কি গুরুর সেবা গ্রহণ করতে পারে?"
ঠাকুর মধুর কন্ঠে জবাব দিলেন --
"এতে কোন দোষ হয় না।"
ঠাকুর ছোট হয়ে ব্রজপ্রেম শিখিয়ে দিলেন ভক্তদের।
জানিয়ে দিলেন বৃন্দাবনের গোপীদের সহজ প্রেমের ধারাটির স্বরুপ।


জয়রাম।। জয়রাম
ভক্তবৃন্দ সব শুনে ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করলেন -- "সত্যিকার ভক্ত কি গুরুর সেবা গ্রহণ করতে পারে?" ঠাকুর মধুর কন্ঠে জবাব দিলেন -- "এতে কোন দোষ হয় না।" ভক্তবৃন্দ সব শুনে ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করলেন -- "সত্যিকার ভক্ত কি গুরুর সেবা গ্রহণ করতে পারে?" ঠাকুর মধুর কন্ঠে জবাব দিলেন -- "এতে কোন দোষ হয় না।" Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on July 06, 2021 Rating: 5

No comments:

sri sri Ramthakur

Powered by Blogger.