বেদবানী দ্বিতীয় খণ্ড।
বেদবানী দ্বিতীয় খণ্ড।
১
২
২
৩
৪
৫
৬
৭
৮
৯"নিজে শান্ত না হইলে কখনো শান্তি পাওয়া যায় না। মানুষ শান্তিই খুঁজিয়া বেড়ায়, কিন্তু কি কৌশলে যে উহাকে লাভ করিতে হয় তাহা জানে না। ভালো মন্দ, জয় পরাজয় লইয়া থাকিলে কামনা বাসনা দূর হয় না এবং চিত্তের উদ্বেগ ও দৈন্য অপসারিত হয় না। ইহার ফলে চিরদিন হাহাকার ও ছুটাছুটি করিয়াই আমাদিগকে বেড়াইতে হয়। কেমন করিয়া প্রকৃত শান্তি লাভ করা যায়, কেমন করিয়া জন্মজন্মান্তরের জ্বালা জুড়াইতে পারা যায় - এই প্রশ্ন স্বতঃই আমাদের মনে উদিত হয়। কিন্তু কয় জন ইহার মীমাংসা করিতে পারিয়াছেন? তিনি বলেন - নিত্য বস্তু বা স্বভাবের সঙ্গ না করিলে দুঃখের হাত হইতে এড়াইবার আর অন্য উপায় নাই। নিজের কর্তৃত্ববুদ্ধি একেবারে বিসর্জ্জন করিতে না পারিলে শান্তিলাভ করা অসম্ভব। নিত্য বস্তু কি? যাহাকে কোনো প্রকারে ত্যাগ করা যায় না তাহাই নিত্য। যাহাকে ধরিয়া থাকিলে পাপ তাপ, দুঃখ যন্ত্রণা ভয়ে পালাইয়া যায় তাহাই নিত্য। এই নিত্যের সেবা করাই ধর্ম্ম। প্রাণ নিত্য, যে হেতু তাহাকে ছাড়িয়া এক মহুর্ত্তও থাকা চলে না। যে প্রাণ জগতের আশ্রয় এবং যাহার ক্রিয়া বা স্পন্দনের বিরাম নাই, সেই প্রত্যক্ষসিদ্ধ প্রাণদেবতার সঙ্গ করিতে হয়। একটা কিছু আশ্রয় বা অবলম্বন না করিয়া সাধন - ভজনে অগ্রসর হওয়া যায় না। কাজেই যিনি সকলের আশ্রয়, সর্বভূতের প্রাণ এবং সর্বব্যাপক তাঁহারই আশ্রয় গ্রহণ করিতে হয়। এই জন্য বৈষ্ণবেরা বলেন - 'আশ্রয় লইয়া ভজে তারে কৃষ্ণ নাহি ত্যাজে।' সর্বাশ্রয় ভগবানের কথা তিনি অনেক সময় বলিয়া থাকেন। এই আশ্রয়কেই উপনিষদে বলা হইয়াছে, সর্বলোক -প্রতিষ্ঠা।
১০
১১
১২
১৩
১৪
১৫
১৬
১৭
নাম প্রাণে করে। ঘুমাইলে জীবের নাম হয়, সেই নাম জাগরণে বিলুপ্ত হইয়া বহু অংশে নানান আখ্যা ধারণ করিয়া নানান রূপে রসে আকৃষ্ট থাকায় নাম যে সর্ব্বদা হয় তাহা জানিতে না পারিয়া প্রকৃতির গুনের দ্বারায় মন বুদ্ধির বৈগুন্যতা দ্বারা নানান বাসনা করিয়া বন্দী হইয়া পড়ে। তাতেই নানান উপাধি মণ্ডিত হইয়া ভাগ্যবশে সুখদুঃখ জন্মমৃত্যু এড়াইতে পারে না। অতএব ধৈর্য্য ধরিয়া প্রানের নিকট থাকিবেন, তবেই নাম শুনিতে পারিবেন।
১৮
১৯
২০
২১
২২
২৩
২৪
২৫
২৬
২৭
২৮
২৯
৩০
৩১
৩২
৩৩
৩৪
৩৫
৩৬
৩৭
৩৮
৩৯
৪০
৪১
৪২
৪৩
৪৪
৪৫
৪৬
৪৭
৪৮
৪৯
৫০
৫১
৫২
৫৩
৫৪
৫৫
৫৬
৫৭
৫৮
৫৯
৬০
৬১
৬২
৬৩
৬৪
৬৫
৬৬
৬৭
৬৮
৬৯
৭০
৭১
৭২
৭৩
৭৪
৭৫
৭৬
৭৭
৭৮
৭৯
৮০
৮১
৮২
৮৩
৮৪
৮৫
৮৬
৮৭
৮৮
৮৯
৯০
৯১
৯২
৯৩
৯৪
৯৫
৯৬
৯৭
৯৮
৯৯
১০০
১০১
১০২
১০৩
১০৪
১০৫
১০৬
১০৭
১০৮
১০৯
১১০
১১১
১১২
১১৩
১১৪
১১৫
১১৬
১১৭
১১৮
১১৯
১২০
১২১
১২২
১২৩
১২৪
১২৫
১২৬
১২৭
১২৮
১২৯
১৩০
১৩১
১৩২
১৩৩
১৩৪
১৩৫
১৩৬" কালেই এই জগৎ চালনা করিতেছে। সময় মতেই সকল পরিষ্কার হইয়া যায়, শীত উষ্ণ দুঃখাদি কাল হইতে হয়। ধৈর্য্যই সকল ধর্ম্মের সার। মনের দ্বারাই বহু অংশ হইয়া প্রাণীসকল নানান রকম উপাধি ধারণ করিয়া থাকে, এই সকলই প্রবাহমান, স্থিতি নাই,—মন হইতেই কাম,ক্রোধ, লোভ উৎপন্ন হয়, স্থিতি করিয়া রাখা যায় না। এই জন্যই জীবসকল বন্ধন হইয়া থাকে। অতএব এই সকল বেগ সহ্য করিতে করিতে নিত্যানন্দ রূপ প্রকাশ হইয়া পড়ে। সত্যকে ভুলিবেন না। সত্য থাকবে। অসত্য অস্থায়ী, থাকে না।
১৩৭
১৩৮
তিনি মঙ্গলময়, সুখময়, তাঁহান আশ্রিত জনের সুখের মঙ্গলের অভাব থাকে না। অতএব সতত সকল সময় তৎ বিষয়ে লক্ষ্য রাখাই পরম পথ। গুরুই সর্ব্বদা রক্ষা করিবেন, কোন চিন্তা করিবেন না। অচিন্ত্য পদকে আশ্রয় করিতে করিতে নির্ম্মল ধ্যান আসে সেই নির্ম্মল ধ্যানের দ্বারা পরম পুরুষ প্রকাশ পায়, তৎপর মনের লয় আসে। এজন্য যে পর্য্যন্ত দেহ অস্তিত্ব থাকে সেই পর্য্যন্তই গুরু স্মরণ করিবে। এই প্রকার মনের লয় হইলেই যে অবস্থা হয় তাহাই ভগবৎ প্রাপ্তি। সম্প্রদায় ভুক্ত দ্বারা তাহা হয় না। সংসারে সম্প্রদায়ই বন্ধন, সর্ব্বব্যাপী পরম ব্রহ্মই মুক্ত বলিয়া কীর্ত্তিত হয়। অতএব মুক্তের সঙ্গে থাকাই শ্রেয়।
১৩৯
১৪০
লোক সকল স্ব স্ব ভাগ্যবশে দেশ, স্থান, ধনী, মানী, বিদ্যা, বুদ্ধি ইত্যাদি দৌলত সম্ভোগ করিয়া থাকে। তাহাতেই লোক সুখী দুঃখী হইয়া থাকে। এই ভাগ্যভোগ পরিহারের জন্যই ধৈর্য্যকে আশ্রয় করিতে চেষ্টা করিতে হয়। অতএব সর্ব্বদাই ধৈর্য্য ধরিয়া চেষ্টা করুন, ভাগ্য হইতেই সকল মীমাংসা পাইবেন। ভাগ্যে যাহা থাকে তাহাই হইবে, সেই জন্য কোন চিন্তা ভাবনা না করিয়া সত্যদেবের অনুশীলন চিন্তা করুন। তিনিই একটা বিহিত করিবেন। ইহা ছাড়া কিছু নাই।
[ বেদবাণী ২য় খণ্ড ১৪০ ]
১৪১
১৪২
১৪৩
১৪৪
১৪৫
১৪৬
১৪৭
১৪৮
১৪৯
লোকের যখন যাহা কিছু ঘটিয়া থাকে সকলি ভাগ্যযোগ জানিবেন ।সত্যনারায়ণের ভাগ নাই,তাঁহার সকল অবস্থাই পূর্ণ জানিবেন ।তাঁহার আশ্রয় নিলে কোন অভাব কি অপূর্ণ থাকে না জানিবেন । ভাগ্যই সকল করিবেন ।
১৫০
সত্যনারায়ণকে ভূলিবেন না। সত্যবানকে সাবিত্রী কালের বৈষম্য চক্র হইতে উদ্ধার করিয়া ত্রিলোকের সকল ঋণ পরিশোধ করিয়াছেন, অতএব সত্যনারায়ণে [র] সেবায় নিযুক্ত থাকুন, তাঁহাকে ভূলিবেন না। ভাগ্যে যাহা যখনই ঘটে তাহা সকলি ক্ষয়শীল, অস্থায়ী বলিয়া জানিতে পারিলে বেদ উদ্ধার হয় এবং সকল ঋণমুক্ত হয় জানিবেন। সত্যের ক্ষয় নাই, অসত্যের অস্থায়ী বস্তুর অস্তিত্ব নাই জানিলে সত্যনারায়ণকে পাওয়া যায়।
১৫১
১৫২
১৫২
১৫৩
১৫৪
১৫৫
১৫৬
১৫৭
১৫৮
১৫৯
১৬০
১৬১
১৬২
১৬৩
১৬৪
১৬৫
১৬৬হরিশ্চন্দ্র,নল,শ্রীবৎস প্রভৃতি,তাঁদের চরিত্র অনুসরণ করিলে দেখিতে পাইবেন যে সত্য ছাড়া আপন কিছুই নাই।অতএব সত্যই ধর্ম্ম,আশ্রয়ই কর্ম্ম,ভাগ্যবশেই জীবের গতাগতি হইয়া থাকে।মন হইতে ভাগ্যফল প্রসব হইয়া থাকে,অতএব মনের সমস্ত বেগ সহ্য করিতে করিতে ভাগ্যফল ভোগদান করিয়া অপরিবর্ত্তনশীল আনন্দধাম প্রতিষ্ঠার অধিকার হইয়া থাকে।সকল অবস্থা [য়]ই সত্যকে স্নেহ যত্ন করিবেন,সত্য হইতেই শান্তি পাইবেন।ভাগ্যফলে জীবগণের ভালমন্দ বিভাগ হইয়া থাকে।
বেদবানী ২য় খন্ড(১৬৬)১৬৭
যাহা যখন হইবে বিধির লিখন তাহা ঘটিবে, তাহাতে জীবের ধৈর্য্য ধরাই কর্ম্ম। যার যখন সময় হয়, তাহার রোধ করার কাহারো (জীবের) কোন শক্তি নাই। সকলই কালের কবলে ক্ষয় হইতেছে। দেবদানবাদি, যক্ষ, রাক্ষস, গন্ধর্ব্ব, মানব, বৃক্ষ, তরুলতা, যত প্রাণীসকল সকলি প্রাণের অধিন, যখন সময় উপস্থিত হয় তখনি কাল হয়, কেহই অকালে গতাগতি করিতে পারে না। এই সকল জানিয়া ধীর প্রকৃতি মোহিত হয় না। অতএব শোক সন্তাপ পরিহারের জন্য ধৈর্য্য ধরিতে চেষ্টা করুন। বিশেষতঃ যার জন্য অনুতাপ করিতেছেন তাকে ত পাইতেছেন না, পাওয়াও যাইবে না। কর্ম্মস্থলের ভাগ্যফলও সময়ে ফলিয়া থাকে, তাহার জন্য চিন্তা ভাবনা না করিয়া যথাসাধ্য চেষ্টা করিতে থাকুন। সত্যকে ভুলিবেন না, সত্যই ধর্ম্ম। ইহা বৈ এ সংসারে ভাগ্যফল মুক্তি দিবার আর কেহই নাই। সকলেই ভাগ্যফল ভোগ করিয়া কেহ শান্তি পায়, কেহ অশান্তিতে থাকে, ইহাই মরভূমের কালের চারণ। অতএব আপনি ধৈর্য্য ধরিয়া স্থির হইবার চেষ্টা করুন। মনেতে বিচার করিয়া দেখিবেন ধৈর্য্য ছাড়া আর কিছুই আপন নাই।
১৬৮
১৬৯
১৭০
১৭১
১৭২
১৭৩
১৭৪
১৭৫
১৭৬
১৭৭
১৭৮
১৭৯
১৮০
১৮১
১৮২প্রাক্তনের ভোগ নানা প্রকারই ঘটিয়া থাকে। [যে] কোন অবস্থায়াই ধৈর্য্য রাখিবার যত্ন করিতে হয়। এই সংসারে দেহগেহ যাহা কিছু সম্মিল [ন] দেখা যায় সকলি স্বপ্ন ভঙ্গুর ন্যায়, সর্ব্বদা ভগবানের নামে জগৎ প্রতিষ্ঠা হইয়া থাকে। অতএব চিন্তা না করিয়া চেষ্ঠা করিতে ত্রুটি না করিয়া প্রারব্ধের ভোগ মুক্ত করিতে হয়। ভগবান ভিন্ন এ জগতে সকলি অলিকবৃত্তি, কেবল আগমপায়ী বলিয়াই প্রকাশ হইয়া থাকে। সর্ব্বদা নাম করিবেন, নাম বৈ আর কিছুই শান্তি দিতে পারে না।
১৮৩
১৮৪
১৮৫
১৮৬
১৮৭
১৮৮
১৮৯
১৯০
১৯১
১৯২
১৯৩
১৯৪
১৯৫
১৯৬
১৯৭
১৯৮
১৯৯
২০০
২০১
২০২
২০৩
২০৮
২০৯
২১০
২১১
২১২
২১৩
২১৪
২১৫
২১৬
২১৭
২১৮
২১৯
২২০
২২১
২২২
২২৩
২২৪
২২৫
২২৬
২২৭
২২৮
২২৯
২৩০
২৩১
২৩২
২৩৩
২৩৪
২৩৫
২৩৬
২৩৭
২৩৮
২৩৯
২৪০
২৪১
২৪২
২৪৩
২৪৪
২৪৫
২৪৬
২৪৭
২৪৮
২৪৯
২৫০
২৫১
২৫২
লোকের ভাগ্যগতিকেই নানান উপসর্গে পড়িয়া থাকে, সেইজন্য চিন্তা না করিয়া সত্যনারায়ণের প্রতি নির্ভর করিয়া ভাগ্যভোগ ত্যাগ করিয়া নিত্য শান্তিময় সত্যকে পাইবেন। চিন্তা করিবেন না। লোকের যাহা যখন ভোগ হইয়া থাকে সকলি সময় গতিকে হয়, তাহাতে বিচলিত না হইয়া ধৈর্য্যদ্বারা ভোগমুক্ত করিতে চেষ্টা করাই সত্যের সেবা জানিবেন।
২৫৩
২৫৪
২৫৬
১৫৬
No comments:
sri sri Ramthakur