"মহাপ্রভু এই নামের ঝোলাখানা আমারে দিছিলেন, আমি শেষ করতে পারি নাই, তুমি ত দুয়ারে দুয়ারে নাম দিয়া বেড়াও, এরে খালি কইরা দেও। "

 সত্যনারায়ণ পুজো সম্পর্কে শ্রীশ্রী ঠাকুর শ্রী মুখে ব্যাখ্যা।



আনুমানিক ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ, শ্রীশ্রীঠাকুর তখন কলিকাতায় কুঞ্জ মজুমদারের গৃহে অবস্থান করছেন।
 এই সময়ে ঠাকুরের মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখা গেল। 
ঠাকুর একের পর এক পাঁচালী লিখে চলেছেন। 
লেখা শেষ করে নিজের কাছে বেশীক্ষণ রাখতেন না। 
কোন না কোন আশ্রিতভক্ত এলেই তার হাতে লেখা পাঁচালী খানা দিয়ে বলতেন, "সত্যনারায়ণ কইরেন, সত্যনারায়ণকে সিন্নী দিয়া পাঁচালী খান পইড়েন।
 কামনা বাসনা সত্যনারায়ণকেই জানাইতে হয়।"
আর একটি বিষয় ভক্তরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, নাম না পাওয়া কেউ এসে ঠাকুরকে প্রণাম করলে তিনি যেচে তাকে বলতে থাকেন, "আপনে নাম নিবেন?"
নিজে থেকেই ডেকে ডেকে নাম দিতে লাগলেন।
 নামও দিচ্ছেন একই নাম, সেই ছয় অক্ষর বিশিষ্ট।

তার পূর্বে কেউ ঠাকুরের নিকট নাম প্রার্থনা করলে, তিনি কতক্ষণ চুপ থাকতেন, হাতের কর গুনতেন।
হাতের কর গোনার পর দেখা যেত ঠাকুর কোন না কোন একটা নাম দিয়ে বলতেন, "আপনাকে মহাপ্রভু এই নাম দিলেন।"
কখনও বলতেন, "আপনাকে আপনার নামই দিলাম।" আবার কখনও কিছুই বলতেন না।
শুধু নাম দিয়ে নামের ব্যাখ্যা করতে থাকেন।
ঠাকুরের দেওয়া নামগুলি কোন একটি নির্দিষ্ট নাম হতো না, ভিন্ন ভিন্ন নাম যেমন থাকত, নামের অক্ষর থাকত বিভিন্ন।
কখনো কখনো এমনও দেখা যেত, ঠাকুর মশায় চুপ করে থাকার পর বলতেন, "কৈ আপনের নাম তো খুঁইজা পাইলাম না, আপনার নাম আমার কাছে নাই।
আপনে শ্যামবাবুর কাছে যান।"
শ্রী শ্রী রামঠাকুর বাণী। 

ঠাকুর মশায়ের এহেন পরিবর্তন দেখে এক ভক্ত বিনীতভাবে জিজ্ঞেস করলেন, ঠাকুর আপনার নিকট আমার দুইটি প্রশ্ন করার আছে। ভক্তটি শ্রীচরণে প্রণাম নিবেদন করে প্রথম প্রশ্নটি করলেন, "ঠাকুর মশায়, এতদিন তো আপনি আমাদের নিষ্কাম ভজনের কথা বলে এসেছেন।
কামনা বাসনা শূন্য হয়ে নিরহংকারী হয়ে নাম সাধন করতে বলেছেন।
এখন বলছেন সত্যনারায়ণ করতে, তাঁর কাছে কামনা বাসনা জানাতে।
দেখছি সত্যনারায়ণের পাঁচালী লিখে দিচ্ছেন জনে জনে। তাদের বলছেন সিন্নী দিয়ে পাঁচালী পড়তে।
সত্যনারায়ণ পূজা তো কাম্য কামনার পূজা। কাম্য-কামনার পূজায় তো অহংকার শূন্য হওয়া যায় না।
এর কারণ কি বুঝলাম না।
তাছাড়া এতে দুটো দল হয়ে যাবে।
একদল নিষ্কামের পক্ষ নেবে, আরেক দল সকাম পূজায় মেতে উঠবে।"


ভক্তের প্রশ্ন শেষ হতেই ঠাকুর বললেন, "আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন কি?"
তখন ভক্ত দ্বিতীয় প্রশ্নটি করলেন, "আপনি এখন যেচে প্রায় ডেকে ডেকে নাম বিতরণ করছেন।
সেই নামও দেখছি ছয় অক্ষর বিশিষ্ট একই নাম।
আগে তো এমন দেখিনি, নাম প্রার্থীকে নাম চাইতে হতো।
তারপর আপনি নাম দেওয়ার হলে নাম দিতেন সে নামও এক হতো না।"


ঠাকুর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর আগে দিলেন।
"হ, বৃন্দাবন গেছিলাম, সেখানে গোপাল ভট্ট জিউর সঙ্গে দ্যাখা হইছিল।
তিনি আমার হাতে একটা ঝোলা দিয়া কইলেন, "মহাপ্রভু এই নামের ঝোলাখানা আমারে দিছিলেন, আমি শেষ করতে পারি নাই, তুমি ত দুয়ারে দুয়ারে নাম দিয়া বেড়াও, এরে খালি কইরা দেও।
তাই অখন ডাইক্যা ডাইক্যা নাম দিয়া ঝোলা খালি করতাছি।"

কিছুক্ষন চুপ থাকার পরে আবার বলতে থাকেন, "অন্ন চিন্তা বড় চিন্তা, দ্যাখবেন খাবার সামনে পইড়্যা থাকব খাইতে পারব না, দেইখ্যা দেইখ্যা না খাইয়া মরব।
এমন দিন আসতেছে নিষ্কামের কথা দূরে থাউক লোকে নামই ভুইল্যা যাইব। কিছু পাওনের লোভে পইড়্যা কাম্য কামনার পূজায় আউগাইয়া আইবো।
ছিন্নি দিয়া সত্যনারায়ণ করতে করতেই ভোগগুলা ছিন্ন ভিন্ন হইব। তখন গুরুর কৃপায় নিষ্কামের পথ আপনা আপনি পাইয়া যাইব।"
গুরু কৃপাহি কেবলম্।

জয়রাম।



"মহাপ্রভু এই নামের ঝোলাখানা আমারে দিছিলেন, আমি শেষ করতে পারি নাই, তুমি ত দুয়ারে দুয়ারে নাম দিয়া বেড়াও, এরে খালি কইরা দেও। "  "মহাপ্রভু এই নামের ঝোলাখানা আমারে দিছিলেন, আমি শেষ করতে পারি নাই, তুমি ত দুয়ারে দুয়ারে নাম দিয়া বেড়াও, এরে খালি কইরা দেও। " Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on July 01, 2021 Rating: 5

No comments:

sri sri Ramthakur

Powered by Blogger.