ঠাকুরের শরীরে রোগের কোন লক্ষন নাই, তাঁহাকে বেশ সুস্থ ও গভীর নিদ্রাভিভূত দেখিয়া ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন,"কেমন করিয়া এই অল্প সময়ের মধ্যে মৃতপ্রায় রোগী এরূপ সুস্থ হইল?" গৃহস্বামী তখন গত রাতের সমস্ত ঘটনা বিবৃত করিলেন।

 গুরু কৃপাহি কেবলম্



কৌশিক আশ্রম হতে ফিরিয়া শ্রীশ্রীঠাকুর একাকী বঙ্গদেশে ফিরিয়া আসিলেন।
ঐ সময় একদিন হুগলীতে আসিয়া জ্বরে আচ্ছন্ন হইয়া গঙ্গার তীরে একটি বৃহৎ বৃক্ষের তলায় বসিয়াছিলেন।
এ সময় ঠাকুরের মাথায় জটা ছিল।
এমন সময় একজন ভদ্রমহিলা গঙ্গা স্নান করিয়া আর্দ্রবস্ত্রে পূর্ণ কলসী কাঁখে সেই পথে যাইতেছিলেন।
ঠাকুর তাহাকে দেখিয়া বলিলেন," মা, আমি বড় তৃষ্ণার্ত, আমাকে একটু জল দেন।"
.......

ভদ্রমহিলা তখনই তাঁহার কলসী হইতে ঠাকুরকে জলপান করাইলেন। স্ত্রী লোকটির কোন সন্তান ছিলো না।
মাতৃসম্বোধন পূর্ব্বে কোনদিনই শ্রবণ করেন নাই।



মা ডাকে তাঁহার মাতৃহৃদয় বাৎসল্য স্নেহে উদ্বেলিত হইয়া উঠিল। তিনি দেখিলেন ছেলেটি ব্রাহ্মণ, গলায় যজ্ঞ সূত্র, গায়ের রং কাঁচা সোনার মত,ভদ্রমহিলার একান্ত ইচ্ছে হইল ঠাকুরকে গৃহে লইয়া যান।নানা চিন্তা করিতে করিতে তিনি গৃহে ফরিলেন।
গৃহে ফিরিয়া স্বামীকে সমস্ত কথা বলাতে তিনিও ছেলেটিকে গৃহে আনিবার মত প্রকাশ করিলেন।
ঠাকুরের জ্বর ক্রমশ বাড়িতেছে, বিকারের লক্ষন দেখা দিয়াছে, ঠাকুরের মাথার জটা কাটিয়া ফেলিলেন,স্হানীয় ডাক্তার আনিয়া চিকিৎসা করিলেন।

........

সমস্তদিন ঠাকুরের অবস্থা একই রকম ছিল,কিন্তু রাত্রির দিকে জ্বর আরো বাড়িতে লাগিল।
স্বামীস্ত্রীর উদ্বিগ্নতার সীমা নাই,তাঁহাদের একমাত্র চিন্তা কি করিয়া ভগবৎপ্রদত্ত তাহাদের, 'পুত্র ' কে সুস্থ করিয়া তুলিবেন। চিকিৎসক পঞ্চম দিনে আশা ছাড়িয়া দিলেন।
স্বামী স্ত্রীর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়িতে লাগিল,এবং ভাবলেন বিধাতা তাঁহাদের পুত্রমুখ দেখাইয়া কাড়িয়া লইতেছেন কেন?
সন্ধ্যার পর চিকিৎসক স্বয়ং কয়েক জন লোক সংগ্রহ করিয়া পাশের বাড়িতে অপেক্ষা করিতে লাগিলেন, শেষকৃত্যের ব্যবস্থা ---রোগীর দেহত্যাগ করিলে তাঁহারা ঐ বাড়িতে যাইবেন।
কেবলমাত্র স্বামীস্ত্রী রোগীকে লইয়া দ্বিতলের ঐ ঘরে রহিলেন,রোগীর দুই পাশে বসিয়া তাহারা হাওয়া করিতেছেন,আর নীরবে অশ্রুবর্ষণ করিতেছেন।
রোগীর জীবনী-শক্তি ক্রমশই হ্রাস পাইতেছে,হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা, নাভির উপর হইতে শ্বাস প্রাবাহিত হইতেছে।
এমন সময় নিচের তলা বন্ধ সদর দরজায় করাঘাতের শব্দ শোনা গেল এবং মনে হইলো কে যেন গৃহ স্বামীর নাম ধরিয়া উচ্চঃস্বরে ডাকিতেছে।


দরজা খুলিয়া গৃহস্বামী দেখিলেন, ঝুলি কাঁধে একজন সাধু দন্ডায়মান, তাঁহার আগমনের উদ্দেশ্য জানিতে চাহিলে ঐ সাধু বলিলেন,"আমি তোর রোগীকে দেখতে চাই।"
গৃহস্বামী তাঁহাকে রোগীর নিকট লইয়া গেলেন, সাধু কিয়ৎক্ষণ রোগীর মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন,পরে আপন ঝুলির ভিতর হইতে একটি বড়ি বাহির করিয়া রোগীর জিহ্বার উপর ঘষিয়া লাগাইলেন।
স্বামী স্ত্রী দুজনকেই উদ্দেশ্য করিয়া সাধু বলিলেন," রোগী এখন ঘুমাইবে,যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজে ঘুম হইতে না উঠে ততক্ষণ তাহাকে জাগাইবে না।
ঘুম হইতে উঠিয়া সে যাহা খাইতে চাহিবে তাহাই খাইতে দিবে।"
কথা কয়টি বলিয়াই সাধু নিচে নামিয়া চলিয়া গেলেন এবং গৃহস্বামী নিচের দরজা বন্ধ করিয়া আসিলেন।তাহারা লক্ষ্য করিতেছেন রোগীর শরীর ধীরে ধীরে গরম হইতেছে,মুখে আর মৃত্যুর ছায়া নাই,হাত-পা মাঝে মাঝে নড়িতেছে।
এই দেখিয়া অভূতপূর্ব আনন্দ আসিয়াছে মনে।
এদিকে পাশের বাড়ির অপেক্ষামান ডাক্তার ও অন্যান্য লোকজনও গভীর রাত্রিতে ঘুমাইয়া পড়িলেন।পরদিন ডাক্তারের নিদ্রাভঙ্গ হইলে সত্ত্বর রোগীর বাড়ীর উদ্দেশ্য রওয়ানা হইলেন।
বাড়ীর দরজা বন্ধ দেখিয়া ভাবিলেন হয়তো রোগীর মৃত্যু হইয়াছে, লোকজনেরা মৃতদেহ দাহ করিতে গিয়াছে, দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিতে লাগিলেন।
দরজার কড়াঘাতে স্বামীস্ত্রীর নিদ্রা ভঙ্গ হইল।স্বামী দরজা খুলিয়া দিলেন।দরজা খোলামাত্র ডাক্তার ব্যগ্র হইয়া রোগীর সংবাদ জিজ্ঞেস করিলেন।
গৃহস্বামী বলিলেন, "ভালো আছে।"
ডাক্তার কিন্তু কিছুতেই বিশ্বাস করিতে রাজী নন,তিনি প্রায় ছুটিয়া উপরে গিয়া রোগীর অবস্থা দেখিয়া বিস্ময়ে হতবাক হইয়া রহিলেন।
ঠাকুরের শরীরে রোগের কোন লক্ষন নাই, তাঁহাকে বেশ সুস্থ ও গভীর নিদ্রাভিভূত দেখিয়া ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন,"কেমন করিয়া এই অল্প সময়ের মধ্যে মৃতপ্রায় রোগী এরূপ সুস্থ হইল?" গৃহস্বামী তখন গত রাতের সমস্ত ঘটনা বিবৃত করিলেন।
সেই দিন সন্ধ্যার পূর্বেই শ্রী ঠাকুরের নিদ্রা ভঙ্গ হইলে মল ত্যাগ করিবার জন্যে উঠিলেন কিন্তু তাঁহাকে ঘরের বাহিরে যাইতে দেওয়া হইলো না, একটি নতুন হাঁড়িতে ঘরের ভিতরই অনেক্ক্ষণ ধরিয়া মল ত্যাগ করিলেন।
সেই মলের অনেক রকম রং ও ভয়ানক দুর্গন্ধ। ঘর পরিস্কার করিয়া ধূপধুনা দিয়ে পরিষ্কার করা হলো।
এবারে ঠাকুর বিছানার উপর বসিয়া ভদ্রমহিলাকে বলিলেন," মা, খাইতে দেন।"
ভদ্রমহিলা বলিলেন," তুমি এখন কি খাবে?"
ঠাকুর বলিলেন," ঘরে যাহা আছে তাহাই দেন।"
ভদ্রমহিলা তখন লুচি,তরকারী ও দুগ্ধ আনিয়া দিলেন। তৃপ্তি সহকারে আহার করিয়া ঠাকুর পুনরায় গভীর নিদ্রায় অভিভূত হইলেন।পরের দিন ঠাকুর সবল ও সুস্থ দেহে সেই গৃহকে আনন্দময় করিয়া তুলিলেন।
এই দম্পতি সর্ব্বদাই পুত্রের জন্য ব্যস্ত থাকিতেন।
ছয় মাস এই বাড়িতে থাকিয়া ঠাকুর তাঁহাদের একদিন বলিলেন," এখানে থাকিয়া কি হইবে, চলেন আমরা কাশী যাই। "
স্বামী স্ত্রী ইহাতে অমত না করিয়া ঠাকুরের সহিত কাশী চলিয়া যান। কাশীতে প্রায় এক বছর অবস্থানের পর শ্রীশ্রী ঠাকুরের সন্মুখেই তাঁহারা উভয়েই একই সময় নশ্বর দেহ ত্যাগ করিয়া নিত্যানন্দধামে চলিয়া যান।
শ্রী শ্রী ঠাকুর নিজেই তাঁহাদের দেহের শেষকৃত্য সমাপন করেন এবং গয়াতে গিয়া তাঁহাদের পারলৌকিক কার্যাদি শ্রাদ্ধ ও পিন্ডদান পর্যন্ত করেন।
জয় রাম।।জয় রাম।।জয় রাম

শ্রী রোহিনী কুমার মজুমদার রচিত শ্রীগুরু শ্রীশ্রী রামঠাকুর গ্রন্থ হতে,
ঠাকুরের শরীরে রোগের কোন লক্ষন নাই, তাঁহাকে বেশ সুস্থ ও গভীর নিদ্রাভিভূত দেখিয়া ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন,"কেমন করিয়া এই অল্প সময়ের মধ্যে মৃতপ্রায় রোগী এরূপ সুস্থ হইল?" গৃহস্বামী তখন গত রাতের সমস্ত ঘটনা বিবৃত করিলেন। ঠাকুরের শরীরে রোগের কোন লক্ষন নাই, তাঁহাকে বেশ সুস্থ ও গভীর নিদ্রাভিভূত দেখিয়া ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন,"কেমন করিয়া এই অল্প সময়ের মধ্যে  মৃতপ্রায় রোগী এরূপ সুস্থ হইল?" গৃহস্বামী তখন গত রাতের সমস্ত ঘটনা বিবৃত করিলেন। Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on July 19, 2021 Rating: 5

No comments:

sri sri Ramthakur

Powered by Blogger.