শ্রীশ্রীরামঠাকুরের লীলা মাধুরীI

 শ্রীশ্রীরামঠাকুরের লীলা মাধুরীঃ~

অক্ষয় তৃতীয়ার কয়েকদিন আগের কথা....
পটিয়ার প্রখ্যাত কীর্তনিয়া শৈলেন্দ্র চক্রবর্তী শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে এসে পায়ে পড়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলেন।
শ্রীশ্রীঠাকুর পরম স্নেহে শৈলেন বাবুকে কুশল জিজ্ঞাসা করতে তিনি কাঁদতে কাঁদতে করুণ কণ্ঠে বললেন--
"ঠাকুর আমি অত্যন্ত দরিদ্র। এই অধমের বাসনা দয়া করে এই দরিদ্রের গৃহে পদধূলি দানে পতিতাধম ব্রাহ্মণকে শান্তি দিন।

অধম ব্রাহ্মণ এই বাসনা নিয়েই শ্রীপাদপদ্ম দর্শনে এসেছি। আপনাকে অর্চনা করার মত কিছুই আমার নাই।
কৃপা পরবশ হয়ে আমার অঙ্গনে পদধূলি দিলে আমি প্রাণের আকুতিতে হৃদয় উজাড় করে কীর্তন করব প্রভু।"
এই বলে শৈলেন বাবু ঠাকুরের পাদপদ্ম স্পর্শ করে পড়ে রইলেন।
Ramthakur

ঠাকুর "জয় গোবিন্দ, জয় গোবিন্দ" বলে মৃদু হাসলেন তারপর কৃপা পরবশ হয়ে বললেন--
"দুর্যোধনের রাজভোগ তুচ্ছ কইরা বিদূরের ক্ষুদের অন্ন তৃপ্তি সহকারে গ্রহণ কইরা শ্রীকৃষ্ণ ধন্য করছেন বিদূররে।
মনে রাইখেন -- 'আশ্রয় লইয়া ভজে, তারে কৃষ্ণ নাহি ত্যজে।"
বিদূর হইল যে দূরে নয়, আশ্রয়ে আছে।

দুর্যোধন হইল স্বয়ং কর্তা, দক্ষ মহারাজ।"
সময় সুযোগ ঘটলে আমি গিয়া আসুম। চিন্তা ভাবনা করবেন না। যান বিশ্রাম কইরা স্নান কইরা প্রসাদ পান গিয়া।"
সেদিন শৈলেন বাবু ঠাকুরের জন্মতিথি পালনের ব্যবস্থা করতে ঠাকুরের অনুমতি নিয়ে সেদিনই চলে যেতে চাইলেন।
"জয় গোবিন্দ" বলে তিনি শৈলেন বাবুকে আশীর্বাদ করলে শৈলেন বাবু চট্টগ্রামের দিকে রওনা হলেন।
অক্ষয় তৃতীয়ার কিছুদিন পর বিধু বাবু ঠাকুরকে প্রণাম করে জিজ্ঞাসা করলেন--
"বাবা, সেদিন চিটাগাং থেকে আসতে কোন অসুবিধা হয়নি ত?"
অন্যান্য ভক্ত আশ্রিতরা ত খুবই আশ্চর্য !!!
ঠাকুর আবার কবে চিটাগাং গেলেন?
বেশ কিছুদিন ধরে ত এখানেই আছেন।
প্রতিদিন নাম বিলাচ্ছেন আর ধর্মালোচনা চলছে এখানে।
কোথাও যাননি ত? কোথাও যেতে ত দেখিনি আমরা।
আপনি শ্রীশ্রীঠাকুরকে চিটাগাং দেখেছেন?
বিধু বাবু বললেন --" না, না, তিনি গেছেন।
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বেলা প্রায় এগারোটায় তিনি কীর্তনিয়া শৈলেন বাবুর বাড়ীতে সশরীরে আবির্ভূত হয়েছেন।
আমরা শুধু দেখেছিই নয়--পায়ে ধরে প্রণামও করেছি।
তিনি আমাদের আশীর্বাদ করেছেন, শৈলেন বাবু কীর্তন শুনিয়েছেন। ভোগ দিয়েছেন। আর ঠাকুর কিঞ্চিৎ ভোগ গ্রহণও করেছেন।
সেদিন তীব্র গরম ছিল বলে আমি ঠাকুরকে ডাবের জলও পান করিয়েছি।"
বিধু বাবু আরও বললেন-- "আমাদের সবার অনুরোধ সত্ত্বেও সেদিন তিনি থাকতে রাজী হন নি।
বলছিলেন -- আমারে টিকিট কাইটা ট্রেনে উঠাইয়া দেন। আইজ থাকা যাইব না। অনেক কাম আছে।"
সেদিন যারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সবাই গিয়ে ট্রেনে একটি আসন পেতে তাঁকে বসিয়ে দিয়েছিল। অসংখ্য লোক এমনকি রেল কর্মীরাও এসে প্রণাম করেছিল।
আমি নিজে তাঁর সাথে এসে ফেণী পর্যন্ত পৌঁছে দিতে চাইলাম।
তিনি বললেন -- উৎসব ছাইড়া আপনাগো যাওয়ার দরকার নাই। আমি একাই যাইতে পারুম।"

বিধু বাবু বললেন -- "আমি অবশ্যই ঠাকুর সেবা করতে পেরেছি।
তিনি সশরীরে চট্টগ্রাম গেছিলেন।"
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন তিনি ফেণীতে যামিনী সাহার বাড়ীর উৎসবেও উপস্থিত ছিলেন।
শেষ পর্যন্ত খুব ভীড়ের মধ্যে ঠাকুরকে খুঁজে না পেয়ে খোঁজ করতে করতে গাড়ী নিয়ে তারা মালাকার বাড়ীতে এসেছিলেন।
কিন্তু ঠাকুর সাড়ে দশটায় ভোগের পর থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ঘরে শুয়েছিলেন এবং সেই সময় ফণীন্দ্র মালাকার চাদরের ওপর দিয়ে ঠাকুরকে বাতাস করেছেন।
এরপর ঠাকুর বিছানা ছেড়ে উঠে কুষ্ঠি লিখতে বসলেন।
ঠাকুরের এই বিভূতিতে সবাই বিস্মিত হলেন।
জিজ্ঞাসা করায় তিনি সর্বত্র নির্লিপ্তভাবে বলেছেন -- "এ ত হয়ই।"
এসব কোন বিশেষ ব্যাপার নয় এমনিভাবে ঠাকুর হেসে উত্তর দিতেন।
জয়রাম।। জয়রাম

শ্রীশ্রীরামঠাকুরের লীলা মাধুরীI শ্রীশ্রীরামঠাকুরের লীলা মাধুরীI Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on June 28, 2021 Rating: 5

No comments:

sri sri Ramthakur

Powered by Blogger.