বাবা, আপনি নিষেধ করেছিলেন তাই আমি রক্ষা পেয়েছি, না হলে এতক্ষণে আমিও থাকতাম হয় হাসপাতালে না হয় আমার চিতাশয্যা প্রস্তুত হত।" এই বলে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন যশোদাদেবী।

 শ্রীশ্রীরামঠাকুরের লীলা প্রসঙ্গে:---


চূড়ামণি যোগ এসেছে, বহু বছর বাদে।
বহু দূরদূরান্ত থেকে অগণিত পুণ্যার্থী নরনারীর আগমন হচ্ছে পাটনা শহরে....
অনেক বছর পর এই যোগে জাহ্নবী জলে স্নানের পুণ্য পিপাসা নিয়ে প্রতিদিন আরও অনেকে আসছেন।
শহরে ভীড় বাড়ছে।
সকলেরই লক্ষ্য সেই পুণ্য দিনটি।
শ্রীশ্রীঠাকুর পাটনায় এসেছেন।
উঠেছেন যশোদাদেবীর বাসভবনে। যশোদাদেবীর আনন্দ আর ধরে না...
এত দিন বাদে চূড়ামণি--যোগ স্নান।
আর আজকেই ঠাকুরের শুভ আগমন, এ যে মণিকাঞ্চন সংযোগ।
তিনি মনে মনে স্থির করেছিলেন যে যোগ স্নানে যাবার আগে একবার ঠাকুর কে প্রণাম করবেন। আর গঙ্গাস্নান সেরে এসে পুনর্বার করবেন ঠাকুরের শ্রীচরণে প্রণাম।
চূড়ামণি যোগে জাহ্নবী জলে স্নান। আগে ও পরে ঠাকুরের রাতুল চরণে প্রণাম করতে পারবেন এমন সৌভাগ্য নিয়ে সুদিন ইতিপূর্বে আর কোনদিনও আসেনি।
যোগস্নানের দিন সকালবেলা যশোদাদেবী ঠাকুরকে জানালেন তিনি ঐ সময় থেকে ঐ সময় পর্যন্ত বাড়ীতে থাকবেন না।
স্নান করতে যাবেন।
যদি ঠাকুরের কোন প্রয়োজন থাকে, এমনিতে ত ঠাকুরের কোন প্রয়োজন থাকে না। যদি থাকে তাহলে তিনি এখন বলুন, যাতে তার ব্যবস্থা তিনি করে যেতে পারেন।
ঠাকুর জানালেন যে তার কোন দরকার নেই।
যশোদাদেবীকে বললেন যে --
যোগ স্নানে গেলে বিপদের সম্ভাবনা, সুতরাং তিনি যেন না যান।
হাসিভরা মুখ মুহূর্তের মধ্যে শুকিয়ে গেল যশোদা দেবীর।
নানা স্থান, গ্রাম গ্রামান্তর থেকে সহস্র সহস্র নর নারী এসেছেন এই স্নান উপলক্ষে -
আর তার বাড়ীর কাছে গঙ্গা।
কিন্তু পুণ্য স্নান থেকে তিনি হবেন বঞ্চিত !!!
অন্তরে আগুন জ্বলছিল তার কিন্তু ঠাকুরের সাবধান বাণী ঠেলে ফেলার দু:সাহস বা স্পর্ধা ছিল না। গঙ্গাবক্ষে যদি শেষ নি:শ্বাস পড়ে সে মরণ যে জীবনের চেয়ে দুর্লভ।
মলিন মুখে যশোদাদেবী শ্রীশ্রীঠাকুরের দিকে তাকিয়েছিলেন।
তাকে আশ্বস্ত করে ঠাকুর বললেন
নাম করতে। নামই সর্বতীর্থের সার, নামেই স্নান হয়।
ক্ষুব্ধ মন নিয়ে যশোদাদেবী আপন ঘরে এলেন।একখানা আসন পেতে ক্ষুণ্ণ মনে নাম করতে লাগলেন।
গঙ্গার তীর থেকে ভেসে আসছে কাঁসর ঘন্টার শব্দ, লক্ষ কন্ঠের কোলাহল ও হর্ষধ্বনি।
চূড়ামণি যোগ স্নানের সময় আরম্ভ হয়েছে।
কতক্ষণ নাম করতে পেরেছিলেন ঠিক স্মরণ নেই।
সহসা কলরব যেন আর্ত্তনাদ হয়ে ফেটে পড়ল..
অজস্র মানুষের আর্তনাদে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠল।
কিছুক্ষণ পরেই লোকজনের আরম্ভ হল ছুটোছুটি, এবাড়ী, ওবাড়ী সব বাড়ীর দরজা, জানালা খুলে পথচারীকে সব লোকের একই প্রশ্ন -- কী হয়েছে?
কিন্তু কারো উত্তর দেওয়ার অবকাশ ছিল না।
আসন ছেড়ে উঠে পড়লেন যশোদাদেবী।
বাতাসে ভেসে আসছে করুণ আর্তনাদ।
সেই হাহাকার ধ্বনি এখনও বিরাম বিহীন।
পরিচিত কেঊ কিছু সঠিক বলতে পারল না।শুনতে পেলেন বহু সহস্র লোক মারা গেছে।
তিনি ত্রস্তপদে নীচে এসে তার দুটি ভৃত্য ও দারোয়ানকে পাঠালেন কী হয়েছে তা জানতে।
কম্পিত ও শঙ্কিত বক্ষে ওপরে এসে একটু দূর থেকে ঠাকুরকে দেখলেন।
চারিদিকে হট্টগোল, হাহাকার ধ্বনি, উল্লাসমুখর গঙ্গাতীর এখন ত্রাসে ভরা --
শুধু ঠাকুর মহাশয় বসে আছেন স্থির, অকম্প দীপশিখার মত।
তার প্রেরিত লোক ফিরে এল অনেক পরে।যে খবর তারা এনেছে তা অতি ভয়ংকর।
নদীর ওপর সাময়িক সেতু ভেঙ্গে পড়ায় বহু সহস্র নরনারীর সলিল সমাধি হয়েছে এবং পদপৃষ্ট হয়ে অনেকের জীবনাবসান ঘটেছে।
এই সংবাদ পেয়ে ক্রন্দনে ভেঙ্গে পড়লেন মমতাময়ী যশোদা দেবী।
আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে ঠাকুরের শ্রীচরণে লুটিয়ে পড়ে বললেন ---
"বাবা, আপনি ঠিকই বলেছিলেন। স্নানে গেলে বিপদ হতে পারে।
এখন যে শুনছি হাজার হাজার লোক মারা গিয়েছে, তাদের আপনজনেরা কী করে এই দু:সহ শোক সহ্য করবে?
সারা শহরে শ্মশানের আর্তনাদ।
বাবা, আপনি নিষেধ করেছিলেন তাই আমি রক্ষা পেয়েছি, না হলে এতক্ষণে আমিও থাকতাম হয় হাসপাতালে না হয় আমার চিতাশয্যা প্রস্তুত হত।"
এই বলে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন যশোদাদেবী।
"যার যাবার সময় হয়েছে তিনি গিয়েছেন ঐ জন্য দু:খ করা বৃথা। সময়মত সকলেই চলে যান, আবার সময় হলে ফিরে আসেন
-- জগতে ইহাই নিয়ম।"
এই বলে ঠাকুর প্রবোধ দিলেন যশোদাদেবীকে।
আস্তে আস্তে শ্রীশ্রী ঠাকুরের শ্রীচরণ থেকে মাথা তুললেন তিনি।
সবিস্ময়ে অনুভব করলেন তার কপালের কাছের মাথার চুলগুলো অসম্ভব রকম ভিজে এবং দেখলেন যে শ্রীশ্রীঠাকুরের শ্রীচরণযুগলও জলে ভরা।
বিছানার যে অংশে তাঁর শ্রীচরণযুগল রেখেছিলেন সেই স্থানটিও সম্পূর্ণরুপে সিক্ত।
এত জল কোথা থেকে এল ?
এতো তার দু'নয়নের জল নয়।
তাতে ত তার মাথা, শ্রীশ্রীঠাকুরের শ্রীচরণ দু'খানি ও বিছানা কোন ক্রমেই এত ভিজতে পারে না !!
বিস্ফারিত নয়নে তাই তিনি ভাবছিলেন
তবে কী ???
এবার আবার শ্রীশ্রী ঠাকুরের ধৌত শ্রীচরণ কমলে আকুল হয়ে লুটিয়ে পড়লেন যশোদারাণী।
জয়রাম।।জয়রাম
বাবা, আপনি নিষেধ করেছিলেন তাই আমি রক্ষা পেয়েছি, না হলে এতক্ষণে আমিও থাকতাম হয় হাসপাতালে না হয় আমার চিতাশয্যা প্রস্তুত হত।" এই বলে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন যশোদাদেবী। বাবা, আপনি নিষেধ করেছিলেন তাই আমি রক্ষা পেয়েছি, না হলে এতক্ষণে আমিও থাকতাম হয় হাসপাতালে না হয় আমার চিতাশয্যা প্রস্তুত হত।" এই বলে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন যশোদাদেবী। Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on June 16, 2021 Rating: 5

No comments:

sri sri Ramthakur

Powered by Blogger.